অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সমর্থন মিলে না এমন মনগড়া কল্পনাকে অসার বলে কৃত নিশ্চয় হয়েছে এরূপ পক্ষপাত শূন্য দ্রস্টার তার বোধশক্তি যতই কেন তীব্র হোক না – প্রত্যেক রোগের ক্ষেত্রে তার দেহ ও মনের স্বাভাবিক অবস্থার বহিঃ প্রকাশিত বৈলক্ষ্ন্য ছাড়া আর কিছুই বুঝতে পারা সম্ভব নয়। অর্থাৎ দ্রষ্টা শুধু লক্ষ করতে পারে বর্তমান রোগ অবস্থায় রোগীর স্বাস্থ্য থেকে বিচ্যুতি; আর তা জানা যায় রোগী নিজে যা অনুভব করেন বা বোধ করেন, পরিচর্যারত ব্যক্তিগণ রোগীর সম্বন্ধে যা বলেন এবং চিকিৎসক নিজে যা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে যা পান তা হতে। বোধগম্য এইসকল লক্ষণ ও প্রকাশের ভিতর দিয়ে ধরা পড়ে ব্যাধির সমগ্র মূর্তি, অর্থাৎ সেগুলি হল ব্যাধির যথার্থ ও ধারণাগম্য প্রতিচ্ছবি।
ব্যাখ্যা: বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে যুক্তি ও বিচারনিষ্ট মনের প্রয়োজন। এখানে কল্পনা বা অনুমান এর কোন স্থান নেই। যেখানে কল্পনাও অনুমানের উপরে জ্ঞানের ভিত্তি সেখানে দৃষ্টি হয় পক্ষপাত দুষ্ট। প্রত্যক্ষ যে জ্ঞান লাভ করা যায় পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে। কিন্তু মন যেখানে নিরপেক্ষ নয় সেখানে পর্যবেক্ষণ যে ভ্রমাত্মক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হ্যানিম্যানের সময়ে চিকিৎসক সমাজ অসার কল্পনা ও বৃথা অনুমানের উপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা করত। রোগী দিগকে তাদের অলীক কল্পনা প্রসূত খেয়ালখুশির আত্মসমর্পণ করতে হতো।
চিকিৎসকগণ তাদের মনগড়া ধারণাকে সমর্থন দেবার জন্য ঘটনা ও তথ্যসমূহ কে বিকৃত করে দেখতেন। তখনকার দিনে শরীরবৃত্ত বিকার যেটুকু বৈজ্ঞানিক তথ্যের সন্ধান পাওয়া যেত তাও কল্পনার অস্বচ্ছতায় ও দুর্বোধ্য অস্পষ্ট ছিল। সেই জন্য তৎকালীন তথাকথিত চিকিৎসাশাস্ত্রের সাহায্য না নিয়ে যেসব লক্ষণ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য সেই গুলির উপর নির্ভরশীল ছিলেন। রোগের উৎপত্তি এবং দেহাভ্যন্তরে তার বিক্রিয়া দেখবার, জানবার এবং বুঝবার যখন অন্য কোন উপায় নেই তখন লক্ষণ সমষ্টিকে রোগের প্রকাশ প্রত্যক্ষ করা হলো রোগের স্বরূপ নিরূপণ করবার একমাত্র পন্থা এবং তা বিজ্ঞানসম্মত। আর এই লক্ষণ সমষ্টি পর্যবেক্ষণের জন্য চাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি যার সাহায্যে চিকিৎসকের অবিকৃত মন সকল তথ্য ও ঘটনাকে যথার্থরূপে গ্রহণ করতে পারবে। হ্যানিম্যান সেই জন্য এই সূত্রে চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় বোনের উল্লেখ প্রসঙ্গে পক্ষ পদ শূন্য দ্রষ্টা (unprejudiced observer) কথাটির উপরে এত জোর দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিকৃতির ফলে রোগীর যেসকল লক্ষণ চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, তা রোগীর দেহ গত পরিবর্তন বা অসুস্থতার ভিতর দিয়ে পরিস্ফুট লক্ষণ শুধু নয়, রোগের প্রকৃত পরিচয় পেতে হলে রোগী নিজে যা অনুভব করে এবং রোগীর শুশ্রুষাকারী রোগের সম্বন্ধে যা বলে তাও চিকিৎসককে তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অঙ্গীভূত করে নিতে হবে। তবেই হবে রোগীর লক্ষণ সমষ্টির সম্বন্ধে চিকিৎসকের পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা।
কোন ভেষজ মানুষের সুস্থ শরীরে যে সকল রোগ লক্ষণ উৎপাদনে সক্ষম অনুরূপ লক্ষণযুক্ত মানব শরীরে তার সূক্ষ্মমাত্রায় প্রয়োগ দ্বারা আরোগ্য করার পদ্ধতিই হলো হোমিওপ্যাথি।
এই পদ্ধতি প্রাকৃতিক নিয়মের কতগুলি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। জার্মান চিকিৎসক স্যামুয়েল হ্যানিম্যান জীবনব্যাপী অনুসন্ধান দাঁড়া প্রকৃতির আরোগ্যের নিয়মের এই সত্য গুলি পর্যবেক্ষণ করে “অর্গানন অফ মেডিসিন” নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি বলেন প্রাকৃতিক আরোগ্যের এই নিয়মগুলি তার আবিষ্কার নয়, তবে কঠোর অধ্যবসায় দ্বারা প্রাপ্ত আবৃত সত্যের উন্মোচন মাত্র। তাই তার অর্গানাম গ্রন্থের নাম পত্রে তিনি লিখে রাখেন- “মানবের প্রয়োজনীয় যে সত্য আমাদের সৃষ্টি ও রক্ষার জন্য পবিত্র ও সুখপ্রদ, তা সর্বজ্ঞানময় অগভীর নিম্নে আবৃত রেখেছেন”। আরোগ্য নীতির প্রাকৃতিক সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এই পদ্ধতির চিকিৎসার উপর রোগ আরোগ্যের জন্য নির্ভর করা যেতে পারে।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির মূল তত্ত্ব: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রধানত সাতটি মূল তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে প্রথম তিনটি প্রধান। এটা সর্বদা তোমাদের মনে রাখতে হবে। যদি কোন প্রেসক্রিপশনে প্রথম তিনটি নীতি কে তাচ্ছিল্য করা হয় তবে বিচার-বিবেচনা করে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
1. সমতত্ত্ব বা law of similia: তিনি সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে প্রকৃতির আরোগ্যের প্রথম নিয়ম হলো সমের প্রতিকার সম। তাই তিনি হোমিওপ্যাথির মূল তত্ত্ব বর্ণনার প্রথম স্থানেই তত্ত্ব কে প্রতিষ্ঠিত করেন। Similia Similibus Curanter অর্থাৎ সমের প্রতিকার সম – এই তত্ত্ব হ্যানিম্যানের বহু পূর্ব থেকেই পৃথিবীতে জানা থাকলেও স্বতন্ত্র একটা চিকিৎসা পদ্ধতি রূপে তিনি এর প্রথম প্রবর্তন করেন। বস্তুত এই প্রধান স্বতঃসিদ্ধ সত্যের উপরই হোমিওপ্যাথি প্রতিষ্ঠা। এই তত্ত্বকে হ্যানিম্যান অর্গাননে সদৃশ্য সদৃশ্য দ্বারা চিকিৎসিত হোক – এই নির্দেশাত্মক বাক্য রূপে প্রয়োগ করেন। এর মূল বক্তব্য হলো সামগ্রিকভাবে রোগীর উপসর্গের পর্যালোচনা করে সুস্থ শরীরে উপসর্গ উৎপাদনক্ষম ভেষজ জাত ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। ভেষজের উপসর্গ ও লক্ষণ সমূহ যত রোগের উপসর্গ লক্ষণের অনুরূপ হবে আরোগ্য ক্রিয়াও তত সুনিশ্চিত রূপে প্রতিপন্ন হবে।
২. অমিশ্র তত্ত্ব বা Low of Simplex: এই তথ্য অনুসারে একসময় মাত্র একটি ঔষধ প্রয়োগ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। কারণ প্রত্যেক বস্তুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং এইজন্যই তা অপর বস্তু থেকে পৃথক। একাধিক ভেষজ বস্তুর মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সমতা থাকতে পারে। কিন্তু সূক্ষ্ম রূপে পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে প্রত্যেক বস্তুর তার নিজস্ব সত্তা ও কার্যের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। অতএব ওষুধকে একক ও অমিশ্র হতে হবে, আলোচনা, পরীক্ষা ও প্রয়োগ করতে হবে। কারণ দুইটি পৃথক বস্তুর সহাবস্থানে তৃতীয় একটি বস্তু সংঘটিত হয়। ওই নব উৎপাদিত বস্তু টি হয় উৎপাদক বস্তু দুটির থেকে পৃথক, স্বতন্ত্র গুন ও বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে নতুবা পূর্বোক্ত বস্তু দুইটির গুণের তারতম্য দেখা দেয়, অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় গুণসম্পন্ন থাকেনা। একাধিক বস্তু মিশ্রিত হলে তাদের আপেক্ষিক পরিমাণের বৃদ্ধি হয় বটে কিন্তু তাদের গুণগত বৃদ্ধি নাও হতে পারে। 500 গ্রাম কোন বস্তুর সঙ্গে পঞ্চ গুণসম্পন্ন 500 গ্রাম অপর একটি বস্তু মিশ্রিত হলে পরিমাণগত ভাবে ওই মিশ্রণটি 1000 গ্রাম হলেও গুণগত ভাবে তাদের গুণের সমাহার যে 6+ 5 বা 11 হবে তার কোনো মানে নেই।
3. অনু মাত্রা তত্ত্ব বা Low of minimum: ভেষজ বস্তুর যে পরিমাণ মাত্রায় কেবলমাত্র শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় শুধু সেই পরিমাণ ভেষজ প্রয়োগ দাঁড়াই রোগ আরোগ্য করতে হবে। কারণ অধিকমাত্রায় ভেষজের শরীরে অধিক মাত্রায় উত্তেজনা ও আলোড়ন সৃষ্টি কারণ হয়, ফলে শরীরের যান্ত্রিক বিকৃতি ও অবাঞ্ছিত রোগ বৃদ্ধি ঘটায়। সুনির্বাচিত সম লক্ষণ যুক্ত ভেষজের সক্রিয় প্রভাব তার অনু পরিমাণ দ্বারাই সম্পন্ন হয়। সুতরাং প্রকৃত রোগ আরোগ্যের জন্য অবশ্যই ভেষজকে যথাসম্ভব অনু মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
4. ভেষজ পরীক্ষা তত্ত্ব বা Low of Drug Proving: ভেষজকে আগে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ এর মাধ্যমে ওই ভেষজ সুস্থ শরীরে কি কি উপসর্গ উৎপাদন করছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। পরে ওই ভেষজ ঠিক যেমন যেমন উপসর্গ উৎপাদনে সক্ষম অনুরোধ উপসর্গ যুক্ত অসুস্থ শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। সুদৃশ্য বিধানমতে কেবলমাত্র সেই সমস্ত রোগীকে প্রয়োগ করতে হবে যার ভেষজ গুণাবলী সুপরিজ্ঞাত, অর্থাৎ সুস্থ শরীরে ওই ভেষজ কি কি উপসর্গ সৃষ্টি করতে সক্ষম তা আগে থাকতে অবহিত হতে হবে। অপরাপর চিকিৎসা পদ্ধতিতে ইতর প্রাণীর ওপর ভেষজ প্রয়োগ দ্বারা তার গুণাবলী পরিজ্ঞাত হতে হবে। তাতে ভেষজের সূক্ষ্ম আরোগ্য কর বিশেষ করে মানসিক লক্ষণাবলী অজ্ঞাত থাকে। কিন্তু সুস্থ মানুষের শরীরে সদৃশ্য বিধানমতে ভেষজ পরীক্ষা দ্বারা ভেষজের সূক্ষ্ম আরোগ্যকরণ গুণ এবং মানবমনের উপর তার প্রভাব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সকল পরিজ্ঞাত হওয়া যায়।
5. পুরাতন ব্যাধি বাঁধ বা Low of Chronic Disease: দীর্ঘকালব্যাপী গভীর পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ এবং গবেষণা দ্বারা হ্যানিম্যান প্রমাণ করেন যে সকল প্রকার পুরাতন ব্যাধির মূল কারণ হলো তিনটি রোগ বীজ বা Miasm. এই তিনটি রোগ বীজ হল Psora, Sycosis, এবং Syphylis.
জীবের দেহ জড়পদার্থের দ্বারা সংঘটিত হলেও তার অভ্যন্তরে মন, প্রাণ, আত্মা, ইচ্ছা,অনিচ্ছা, কামনা, বাসনা ইত্যাদির অস্তিত্ব আমরা অনুভব করি। জগতের সকল পদার্থই কোন না কোন শক্তি দ্বারা স্বয়ংক্রিয় হয়। স্বয়ংক্রিয় আমাদের দেহ ও প্রাণশক্তি vital force দাঁড়া স্বয়ংক্রিয় হয়। প্রাণশক্তি আবার মনের দ্বারা পরিচালিত। চিন্তা, কামনা, বাসনা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি এগুলো হলো মনের ক্রিয়া কলাপ। যেহেতু চিন্তাধারা মন, মনের দ্বারা প্রাণ এবং প্রাণের ধারা দেহ পরিচালিত হয় সেহেতু চিন্তার সু বা কু প্রভাব ক্রমাগত মন-প্রাণ এবং দেহের উপর পড়বে।
মনুষ্য দেহ সুমনন পরিচালন যোগ্য অর্থাৎ দেহাভ্যন্তরস্থ মন যদি তার চিন্তাধারা সুপথে পরিচালিত করে তবে তার প্রভাবে মন-প্রাণ এবং দেহের সুশৃংখলা বজায় থাকবে। কিন্তু জীব প্রকৃতির এই নিয়ম যদি লংঘন করে অর্থাৎ মন তার চিন্তা ধারা কোন পথে পরিচালিত করে তবে ওই কুচিন্তাধারা প্রথমে মনের সুশৃঙ্খলা ছিন্ন করবে। মন যেহেতু প্রাণের পরিচালক সুতরাং বিশৃঙ্খলা মনের প্রভাব প্রাণে এবং বিশৃংখল প্রাণশক্তির কু প্রভাব স্থূল দেহের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। চিন্তা ধারাকে কু পথে পরিচালিত করলে মনের সুশৃঙ্খলা ছিন্ন হয়ে দেহে যে রোগের সৃষ্টি হয় মহাত্মা হ্যানিম্যান তাকে সূরা নামে অভিহিত করেন। তিনি বলেন তিনটি রোগ বীজ সমস্ত পুরাতন ব্যাধির কারণ হলেও এদের মধ্যে Psora- র কাজই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, এটাই হলো জীবের সমস্ত ব্যাধির প্রকৃত মুলিভূত কারণ।
6. ভেষজ ক্রিয়াশীলতা বাদ বা Low of Drug Dynamization: সম চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে জীবের স্থূল দেহকে স্বয়ংক্রিয় করে প্রাণশক্তি বা vital force। প্রাণশক্তি স্বয়ংক্রিয় শক্তি। রোগ শক্তি দ্বারা প্রথমত এই প্রাণশক্তি বিক্রিত হয়। সুতরাং প্রাণশক্তিকে ব্যাধি মুক্ত করতে হলে ভেষজের স্বয়ংক্রিয় শক্তি দ্বারাই তাকে ব্যাধি মুক্ত করা প্রয়োজন।
স্থূল অবস্থান ভেষজের অন্তর্নিহিত আরোগ্য কর সক্রিয় শক্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। পারস্পারিক ঘর্ষণ মন্থন বিচূর্ণ ইত্যাদি পদ্ধতি দ্বারা ভেষজের অন্তর্নিহিত এই শক্তিকে জাগ্রত করতে পারা যায়। অনু মাত্রায় ভেষজের সক্রিয় আরোগ্য কর শক্তির প্রয়োগে রোগ শক্তি দ্বারা বিকৃত প্রাণশক্তি সম্পূর্ণরূপে রোগ মুক্ত হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।
7. প্রাণশক্তি বাগ বা Low of Vital Force: জীবের দেহটি একটি জড় পদার্থ। কারণ মৃত্যুর পর আর এই দেহের কোন রোগ ক্রিয়া করার ক্ষমতা থাকেনা। সুতরাং প্রাক মৃত্যু পর্যন্ত কোন শক্তি যে এই দেহকে পরিচালিত করত এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না। হ্যানিম্যান প্রমাণ করেন যে জীবের স্থূল দেহের সজীবতা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ শৃঙ্খলা যে শক্তি দ্বারা সাধিত হয় তাহলো প্রাণশক্তি বা Vital Force. কোন জড় পদার্থ অপশক্তির সাহায্য ব্যতিরেকেই নিজে স্বয়ংক্রিয় হতে পারে না। একটি জড় পদার্থ অপর জর পদার্থকে ক্রিয়াশীল করতে পারেনা, যদি না তার পিছনে কোন শক্তি থাকে, সুতরাং আমাদের এই জোরও দেহ যে স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে তার পেছনে যে কোন শক্তি কাজ করছে তা আমরা সহজেই অনুমান করি। এই শক্তিকেই হ্যানিম্যান প্রাণশক্তি বলেছেন। তিনি বলেন প্রাণশক্তি দেহের পরিচালক। দেহের সকল প্রকার স্বাভাবিক ক্রিয়া ও অনুভূতির মূল উৎস এই প্রাণশক্তি। রোগ শক্তি যখন জিবকে কে আক্রমণ করে তখন প্রথমেই এই প্রাণশক্তি আক্রান্ত হয়। দেহে যে কষ্টকর উপসর্গগুলি দৃষ্ট হয় তা হল বিকৃত প্রাণশক্তির স্থূল দেহে বহিঃ প্রকাশিত রূপ। জীবের যখন রোগ মুক্তি ঘটে তখন চিকিৎসা দ্বারা প্রাকৃতিক নিয়মে এই প্রাণশক্তি আগে রোগমুক্ত হয়।
সুতরাং হোমিওপ্যাথিক প্রেসক্রিপশনে প্রকৃত রোগ আরোগ্যের জন্য ভেষজের আত্মা সদৃশ শক্তির সেই ক্রম নির্বাচন করতে হবে রোগ শক্তি যত ক্রম পর্যন্ত জীবনীশক্তি কে আক্রমণ করেছে ঠিক তার অনুরোধ বা কাছাকাছি।
অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার অপকারিতা – Bed Effects of Allopathic Treatment
“শরীরম ব্যাধি মন্দিরম”
এই কথাটা যে কত সত্য সে সম্বন্ধে অধিক বলা নিষ্প্রয়োজন। তবে ভগবান মানুষের দেহটাকে কেবল ব্যাধির মন্দির করেই সৃষ্টি করেন নাই, সঙ্গে সঙ্গে দেহের মধ্যেই ব্যাধির ঔষধের ভাণ্ডারও স্থাপন করেন, রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এজন্যেই রাগ হলেই মানুষ মরেনা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেহ ও রোগের যুদ্ধে, দেহই জয় লাভ করে। দেহের মধ্যে প্রকৃতির এই ঔষদের ভান্ডারের সন্ধান ভারতীয় ঋষিগণ বহু পূর্ব থেকেই অবগত হলেও সাধারণ মানুষের কাছে তা অজ্ঞাত ছিল। বিজ্ঞান বলে সাধারণ মানুষ কিছুদিন হল সেই ঔষধ ভান্ডারের সামান্য পরিচয় পেতে আরম্ভ করেছে। এই ঔষধ ভান্ডার গলি হল সাতটি প্রধান গ্রহ পরিচালিত শরীরের সাতটি গ্রন্থি আর এই গ্রন্থির অধীন উপগ্রন্থী সমূহ।
এই গ্রন্থি উপ গ্রন্থি নিঃসৃত রস (Hormones) এবং গ্রন্থসমূহের উপাদানিক উপাদান (substance) গুলিই হল ঔষধ। গৃহস্থ এই গ্রন্থে রসে ভগবান কিরূপ ঔষধের শক্তি নিহিত করে রেখেছেন। এবং বিজ্ঞান বলে মানুষ তার যতটুকু পরিচয় পেয়েছে তা ভাবতেও আশ্চার্য্যন্বিত হতে হয়।
প্রাকৃতিক নিয়মের উলঙ্ঘনই রোগের প্রধান কারণ। রোগ হলে আরোগ্যের জন্য ঔষধ হাতে প্রকৃতি দেবীই এগিয়ে আসেন। জ্ঞানী মানুষ তার ওষধের উপর নির্ভর করে সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘজীবন লাভ করেন। মানুষের অজ্ঞতা রূপ অবিশ্বাস সেই অমৃতময় ওষুধ থেকে তাকে বঞ্চিত করে। তোমাদের আশেপাশে যেসকল দীর্ঘজীবী মানুষ রয়েছেন তাদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই জানতে পারবে যে ছেলেবেলা থেকে এ্যালোপ্যাথিক এর বিক্রিত ঔষধ তাদের পেটে পড়েনি বলেই তারা প্রাকৃতিক ঔষধের বলে দীর্ঘজীবী। ছোটবেলা থেকে বিকৃত ঔষধ পেটে পড়লে সুস্থ শরীরে দীর্ঘজীবন লাভ করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। জ্ঞানী চিকিৎসক এ তথ্য জানেন বলেই তারা সকলকে পাইকারি হারে ওষুধ খাওয়ালেও নিউজ পরিজনকে ঔষধ খাওয়াতে তাদের হাত কাঁপে। দীর্ঘজীবী ডক্টর অ্যালবার্ট হার্ভার্ড (Albert Hubbart), বলেন my father practiced medicine for 67 years but he never practiced on me অর্থাৎ আমার পিতা 67 বছর যাবৎ চিকিৎসা ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন কিন্তু আমি অসুস্থ হলে তিনি কখনো আমাকে ওষুধ দিতেন না।
রোগ হওয়া মাত্র যে মানুষ আজ এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে তা ভাবি মানবকুলের পক্ষে অতি দুর্ভাগ্যজনক কারণ এর ফলে প্রাকৃতিক সত্য থেকে ক্রমশ তারা দূরে সরে যাচ্ছে। প্রকৃত জ্ঞানী জানেন যে রোগ হলে ওষুধ খেতে হবে তার কোনো মানে নেই তাতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি। প্রখ্যাত চিকিৎসক Dr. Noyes বলেন যে-
There is no reason, justice, nor necessity for the use of drugs in diseases, I believe that, this profession, this art, this misnamed science, is none other than a practice of fundamental fallacious, principals important of God morality wrong and bodily harmful.
অর্থাৎ ডাক্তার-নোইয়েসের মতে রোগা আরোগের জন্য ওষুধ প্রয়োগের কোন যথার্থ কারণ, কোন সদ যুক্তি বা প্রয়োজন খুঁজে পাওয়া যায় না। আমার মনে হয় এই চিকিৎসা ব্যবসা, এই চিকিৎসা কলা, এই ভুয়ো চিকিৎসা বিজ্ঞান আগাগোড়া কতগুলি ভুল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত, এই চিকিৎসা ব্যবসা মানুষের পক্ষে উপকারী নয়। এই ব্যবসা নীতি হিসাবেও অপরাধজনক এবং মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক।
এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসকগণ জেনেই হোক আর না জেনেই হোক সমাজের অশেষ অপকার করে থাকেন। প্রথম জীবনে এই ব্যাপারে মনোনিবেশ না করলেও পরিনত বয়সে বহু চিকিৎসককে পশ্চাৎতাপ করতে দেখা গেছে। ওষুধ প্রয়োগের থেকেও রোগীর বিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তি অধিক কাজ করে।
এ্যালোপ্যাথিক ওষুধে অপকার হলেও বহু অর্থ ব্যয়ে সাড়ম্বরে রাজকীয় ভাবে চিকিৎসা চলছে। উচ্চ ফি এ নামি চিকিৎসক চিকিৎসা করছেন এবং দামি নামি ঔষধ ফেটে পড়ছে এই মানসিকতাই অধিক কাজ করে। এই ব্যাপারে বহু পর্যবেক্ষণ পরীক্ষার পর প্রখ্যাত চিকিৎসক Dr Magandie Paris এর এক medical classe এ ছাত্রদের সামনে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন medicine is a great humbug. I know, it is called science, science indeed! It is nothing like science doctors are nearly empirics when they are not Charlatans.
Let me tell you, gentleman when I did when I was a physician at the Hotel Diue. Some three of our thousand patients past through my hands every year. I divided the patients into 3 classes. With one I followed the rules and regulations of modern medical science and give the usual medicines, without having the list idea why or wherefore to others I gave bread pills and coloured waters, without of course, telling them know anything about it.
And occasionally I would create a third division, to whom I gave nothing, whatever, this last fret a good deal. The felt that they were being neglated unless they were drugged the embeciles(and the irritated themselves until they really got sick). But nature always come to the rescue and all the third class got well. There was little coloured water. The mortality was greatest among those who got the bread pills and those drugged according to the dispensary.
অর্থাৎ ঔষধ একটি অনিষ্টকর বস্তু। ওষুধ ব্যবসা একটি মস্ত বড় প্রতারণা। আমরা জানি একে চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে। বিজ্ঞানই বটে। তবে বিজ্ঞানের বিশেষ জ্ঞান বা সুপরীক্ষিত জ্ঞান এর মধ্যে কিছুই নাই। চিকিৎসকরা প্রবঞ্চক না হলেও আত্ম প্রতারক অর্থাৎ বিচার বিবেচনা প্রয়োগ না করে তারা গতানুগতিক পথেই চলেন।
আমি যখন হোটেল ভিউ নামক হাসপাতালে পরিচালনায় ছিলাম, তখন ওষুধের দুষ গুণ পরীক্ষা করার জন্য আমি কি করেছিলাম শুনুন । প্রতিবছর 3 – 4 হাজার রোগী আমাকে দেখতে হতো । আমি রোগীদের তিন শ্রেণীতে ভাগ করেছিলাম।
এক শ্রেণী কে নির্বিচারে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র সম্মত ব্যবস্থাপত্র এবং ওষুধপত্র দিতাম।
দ্বিতীয় শ্রেণি কে ওষুধের পরিবর্তে খাদ্য করি এবং রং করা জল দিতাম। আমার এই প্রচারণা তারা যাতে ধরতে না পারে, সেই দিকে সর্তকতা অবলম্বন করি এইরূপ পড়তাম।
মাঝে মাঝে আমি তৃতীয় শ্রেণি সৃষ্টি করতাম। এই তৃতীয় শ্রেণীর রোগীদের ঔষধ এর আবেদন নির্মমভাবে প্রত্যাখ্যান করতাম। আমার এই প্রত্যাখ্যানে তারা বিশেষভাবেই বিরক্ত হয়ে উঠত। এরা ভাবতো যে এদের ইচ্ছা করি অপেক্ষা করা হচ্ছে। নিজের মনে খুঁত খুতির দরুন এই দুর্বলচিত্ত লোকগুলি সত্য সত্যই অসুস্থ হয়ে পড়তো। কিন্তু প্রকৃতি এদের রক্ষায় এগিয়ে আসছেন ফলে এই তৃতীয় শ্রেণীর রোগীরা আপনার থেকেই কিছুদিনের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করত।
যাদের আমি ওষুধের বদলে খাদ্য পড়ি এবং রং করা জল দিতাম তাদের মধ্যেও প্রায় কেউই মৃত্যুর মুখে পতিত হতো না। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রের চুলচেরা বিধান অনুযায়ী যাদের আমি ওষুধ দিতাম তাদের মধ্যেই অনেকে মৃত্যুমুখে পতিত হত।
এর থেকে আশা করি এ্যালোপ্যাথিক ঔষধের দোষ গুণ সহজে বুঝতে পারছ। যারা কথায় কথায় ঔষধ খায় তাদের মনে রাখা উচিত প্রত্যেকটি ঔষধ বৃষ্টির ক্ষতিকর। এই বিষ ঔষধের মাধ্যমে পেটে গিয়ে কিরূপ অবস্থার সৃষ্টি করে বিখ্যাত এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎক Dr Lind তা সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন। তিনি বলেন যে- almost every virulent poison known to man is found in allopathic prescription, this poisons have a tendency to accumulate in the system to concentrate in certain parts: and organs and then to cause continual irritation and actual destruction of tissues. By far the greatest part of all chronic diseases are created or complicated through the suppression of acute diseases by means of drug poison, and through the distractive effects of the drugs themselves.
অর্থাৎ মানুষ কত রকম ভয়াবহ বিষ এর সন্ধান পেয়েছে তার প্রায় সমস্তই এলোপ্যাথিক ঔষধের মধ্যে আছে। ওষুধের সঙ্গে এই বিশেষ করে দেহে সঞ্চিত থাকে। এরপর তা শরীরের যেকোনো অংশে অথবা দেহ পরিচালক যে কোন যন্ত্রে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এবং ওই স্থানকে অথবা ওই দেহ পরিচালক যে কোন যন্ত্রে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এবং ওই স্থানকে অথবা ওই দেহ পরিচালক যন্ত্রকে সর্বদা ক্লিষ্ট করতে থাকে। ওই অঙ্গের বা যন্ত্রের প্রাণ কোষগুলো ওই বিষের প্রভাবেই ধ্বংস হতে থাকে। নতুন রোগ আমরা ওষুধ প্রয়োগে আরোগ্য করি। বলাবাহুল্য এটা আরোগ্য নয়। নতুন রোগকে আমরা ঔষধ বিষের দ্বারা চাপা দিই। কার প্রকাশকে স্তব্ধ রাখি। ঔষধ বিষ দ্বারা এরূপ রোগ চাপা দেওয়ার ফলে ওই বিষের ধ্বংস ক্রিয়ার পরিনাম দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি উৎপন্ন হয় অথবা নানাবিধ জটিল দুরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়।
সুতরাং ওষুধ যে আমাদের কি ভয়ানক ক্ষতিসাধন করে এ কথাটি সর্বদা মনে রাখতে হবে। সামান্য মাথাধরা সর্দি-কাশি-জ্বর অম্বল হলেই সঙ্গে সঙ্গে অ্যালোপেথিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আর খাল কেটে দুরারোগ্য ব্যাধি রূপ কুমির ডেকে আনা একই কথা। সাধারণ রোগে প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বিশ্রাম পত্র এবং নিয়ম শুশ্রূষার ধারা নির্দোষ রূপে রোগ আরোগ্য করা সম্ভব। তাই প্রফেসর Alonzo Clark, MD বলেন – “In there zeal to do good, physicians have done much harm. They have harit many to the grave, who would have recovered if left the nature. All our curative agents are poisons, and as a consequence every dose diminishes the patient’s vitality. If patients get well in some cases, it is in spite of the medicines……”
অর্থাৎ আরোগ্য করার আগ্রহ চিকিৎসকরা রোগীর ভয়ানক সর্বনাশ সাধন করে গেছেন। বহু রোগীকে তারা দ্রুত মৃত্যুর ঘরে ঠেলে দেন। এসব রোগীর ওপর ঔষধ প্রয়োগ না হলে এরা প্রাকৃতিক নিয়মে অর্থাৎ নিজ নিজ জীবনে শক্তির জোরে আরোগ্য লাভ করত। রুক আরোগ্যের জন্য আমরা যত প্রকার ওষুধ আবিষ্কার করেছি তার সমস্তই বিষাক্ত পদার্থ। এইজন্যই ঔষধ এর প্রত্যেকটি মাত্রা রোগের জীবনীশক্তি হ্রাস করে। ওষুধ খেয়েও কতগুলি রোগীর আরোগ্য হয়। কিন্তু এই আরোগ্যলাভ ওষুধের গুনে না তা ঘটে রোগীর জীবনী শক্তির প্রভাবে।
তরতাজা জীবনী শক্তি রোগ এ রোগের প্রধান হাতিয়ার, ঔষধ নয়। প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে সুশৃংখল জীবনধারণ, যথানিয়মে আহার নিদ্রা, আসন মুদ্রা দ্বিধারা এই জীবনে শক্তি কে আরো অধিক প্রাণবন্ত করা যায়। রোগ শক্তি এই জীবনীশক্তি কি প্রথম আক্রমণ করেন যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে স্থূল শরীরে। ওষুধের মধ্যে যে বিষ থাকে তা প্রাণশক্তিকে ধীরে ধীরে নিস্তেজ করে। প্রত্যেক ঔষধি বিষ থাকবেই থাকবে তা না হলে ওষুধের কাজ হবে না।
ভারত গভর্মেন্টের ভূতপূর্ব স্বাস্থ্য সভার সদস্য Dr Hurty(Ex. Indian State Board of Health) বলেন – there is not a single medicine in the world that does not carry harm in its molecules.
Allopathic চিকিৎসা এদেশে চালু হওয়ার আগে প্রত্যেকটি মানুষের আয়ু স্বাস্থ্য সফলতা মানসিকতা সরলতা যে অবস্থায় ছিল আজ মুড়ি-মুড়কির মতো এই ঔষধ সহজলভ্য হওয়ায় তার মান কোথায় নেমে গেছে তা ভেবে অন্তত এখন থেকেই সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও এখন এই ব্যাপারে খুবই উদ্বিগ্ন। তাদের মতে এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার যেনতেন প্রকারে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এর অল্টারনেটিভ যে কোন চিকিৎসা পদ্ধতিকে তারা সাদরে আহবান জানান যার ভিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যার কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া অর্থাৎ side effect নেই।
যোগাসন ব্যায়াম প্রাণায়াম এর মোকাবেলায় সফল হবে। এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা যদি দুর্লভ হয়ে যেত তবে মানবকুলের পক্ষে তা আশীর্বাদ স্বরূপ হত। Dr. James Johnson বলেন – I declare as my conscious conviction founded along with experiences, that if there were not a single physician, surgeon, midwife, chemist, druggist, nor drug on the face of the earth, there would be less sickness and less mortality then now prevail.
অর্থাৎ নিজের বিবেক বুদ্ধি দ্বারা সমর্থিত এবং অভিজ্ঞতালব্ধ সত্যের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আমি ঘোষণা করছি যে – যদি সমস্ত চিকিৎসক, অস্ত্র চিকিৎসক, ধাত্রী, ওষুধ প্রস্তুতকারক, ঔষধ বিক্রেতা এবং ঔষধ পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যেত, তবে রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে তুলনায় বহুগুণ কমে যেত।
তাই যারা অ্যালোপ্যাথি ওষুধ, চিকিৎসা ও তৎসংক্রান্ত কোন পেশার সঙ্গে জড়িত তাদের দেশমাতৃকার কথা মনে রেখে, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কথা স্মরণে রেখে যত কম ওষুধ দ্বারা রোগীর আরোগ্য করা যায় এবং এর সাইড এফেক্ট কি তা জনসাধারণকে যেন বুঝানো যায় তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্যার জেমস (sir James bay – president of a British medical association) তার অন্তিম অভিজ্ঞতা থেকে অত্যন্ত বিষাদ এর সঙ্গে বলেন our treatment of disease is not a science nor even a refined art what a thriving industry.
অর্থাৎ আমাদের রোগ চিকিৎসা প্রণালী বিজ্ঞান সম্মত নয়। এটি সুন্দর কোন শিল্প ও নয়। এটা শুধু একটা লাভজনক ব্যবসা।
সুতরাং যারা সামান্য কারণেই মুড়ি-মুড়কির মতো এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ গলাধঃকরণ করে থাকে তাদের অন্তত চিন্তাশীল আলোপথিক দিকপালদের অভিজ্ঞতা লব্ধ সিদ্ধান্ত গলিতে একবার মনোনিবেশ করতে আবেদন জানাই।
যখনঐ কোন ওষুধ খাবে কোন বিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শমতো তা খেতে হবে। যে চিকিৎসক যত রকম ওষুধ দেবেন তাকে তত অভিজ্ঞ হিসাবে চিহ্নিত করতে পার। বিনা প্রেসক্রিপশনে কখনো কোন ঔষধ খাওয়া উচিত নয়।
তোমরা জানো কি অ্যালোপ্যাথি নামটি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক হ্যানিম্যানের দেওয়া? এ্যালোপ্যাথিক শব্দগত অর্থ হলো বিষম বা বিশ্ব দৃশ্য চিকিৎসা পদ্ধতি। গ্রিক শব্দ Allos এবং Patheia শব্দদ্বয়ের যোগে এই জার্মান শব্দটি তিনি গঠন করেন। Allos শব্দের অর্থ other অর্থাৎ ওপর বা অন্য, Patheia শব্দের অর্থ কষ্ট ভোগ বা তার অনুভূতি। Allopathy শব্দটি Homeopathy শব্দের বিপরীত অর্থ।
প্রথম জীবনে হ্যানিম্যান একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসা ব্যবসা পরিচালনা করার সময় চিকিৎসাশাস্ত্রের নীতিগুলো তার মত হয় না। তখনকার চিকিৎসাশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে কোন ভেষজ রোগ আরোগ্য করার ক্ষমতা নেই তবে উৎপাদনের ক্ষমতা তার মধ্যে আছে।
যখন কোন মানুষকে কোন রোগ আক্রমণ করে তখন যদি তার শরীরে ওই রোগের বিরুদ্ধ ধর্মী কোন রোগ – ভেষজ প্রয়োগ দ্বারা উৎপন্ন করা যায় তবে পূর্ববর্তী রোগের প্রকাশ স্তব্ধ থাকবে যার দ্বারা রোগী সুস্থ বোধ করবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের এই নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে চিকিৎসা কর্মকে প্রতারণামূলক কাজ বলে মনে কষ্ট পেতে লাগলেন। তাছাড়া মানসিকতা, স্বভাব, চরিত্র, শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন তা সত্বেও নির্দিষ্ট রোগের জন্য সকল রোগীরই নিদৃষ্ট ঔষধ প্রয়োগের ব্যাপারটা তার কাছে অবৈজ্ঞানিক মনে হতে লাগলো। তৎকালীন এরূপ চিকিৎসা প্রণালীতে তার অশ্রদ্ধা এবং বীতস্পৃহ দেখা দেয়। রোগ আরোগ্যের অনিশ্চয়তা এবং নিরামযয়ের কোন নির্দিষ্ট নিয়মের অভাবে হতাশ হয়ে তিনি চিকিৎসা ব্যবসা ত্যাগ করেন।
এরপর তিনি সুদীর্ঘকাল ব্যাপী নিরলস গবেষণা দাঁড়া রোগারোগ্যে প্রকৃতি প্রদত্ত কতগুলি নিয়ম পর্যবেক্ষণ করেন। ক্রমশ তিনি দেখতে পান প্রাকৃতিক রোগ আরোগ্যের প্রত্যেকটি নিয়ম এর পেছনে সুশৃংখল নিয়ম, নীতি, সুর, ছন্দ আছে যা চিরকাল অপরিবর্তিত থাকে। 1790 খ্রিস্টাব্দে হ্যানিম্যান কুলীনের মেটেরিয়া মেডিকা দেখতে পান চায়না বা সিনকোনা ম্যালেরিয়া জ্বরের নির্দিষ্ট ঔষধ। সিনকোনা অধ্যায়ের পাদটীকা লেখা ছিল যে, সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে সিনকোনা ম্যালেরিয়া জ্বরের উপসর্গের অনুরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করে। এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি নিজে সিনকোনা পান করতে আরম্ভ করেন। নিজ শরীরে ম্যালেরিয়া জ্বরের উপসর্গের অনুরূপ উপসর্গ লক্ষ করেন।
ওষুধ টির নাম গোপন রেখে তিনি তাঁর পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তির উপর পরীক্ষা করে একই ফল পেলেন। এতে তাঁর ধারণা হলো যে রোগা আরোগের জন্য ব্যবহৃত প্রত্যেক নির্দিষ্ট ঔষধই রোগের উপসর্গের অনুরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। তখন তিনি বন্ধুবান্ধব ছাত্র-ছাত্রী আত্মীয় স্বজন এবং নিজের উপর একটির পর একটি ভেষজের প্রয়োগ দ্বারা সেসবের গুণ নির্ণয় করতে চেষ্টা করেন। তখন তিনি দেখলেন, যে ঔষধ রুগ্ন শরীরে উপসর্গ নিরসন করে ঠিক সেই ঔষধি সুস্থ দেহে অনুরূপ উপসর্গ সৃষ্টি করেন। পরীক্ষা দ্বারা তিনি নিশ্চিত হলেন যে সুস্থ শরীরে রোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে ওষধ রুগ্ন শরীরের রোগ বিনাশে সক্ষম। এই প্রাকৃতিক সহজ সত্যের ভিত্তিতে হ্যানিম্যান নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। তিনি এই নব পদ্ধতির নাম দিলেন সম চিকিৎসা হোমিওপ্যাথি এবং পূর্বের নীতিহীন চিকিৎসার নামকরণ করেন চিকিৎসা অ্যালোপ্যাথি।
অ্যালোপ্যাথি পদ্ধতিতে ভিন্ন জাতীয় অপর ক্রিয়া (সম এর বিপরীত – বিসম) উৎপাদন দ্বারা রোগ ক্রিয়া কে আরোগ্য করার কল্পনা করা হয়- তাই তা বিষম চিকিৎসা।
Allopathy মতে curing of a diseased action by the inducing of another of a different kind yet not necessarily disease.
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগের সংজ্ঞা নির্বাচন দাঁড়া এবং সাধারণ উপসর্গ অনুসারে চিকিৎসা করা হয়। রোগীর কয়েকটি সাধারণ প্রধান উপসর্গের পর্যালোচনা দাঁড়া ব্যাধির একটি বিশেষ সংখ্যা এবং তদানুসারে সেই ব্যাধির জন্য বিশেষ ঔষধ দেওয়া হয়। এই চিকিৎসা প্রদত্ত ভেষজের গুণাগুণ তা পূর্বে কখনো মানব এর উপর পরীক্ষিত হয়নি।
রোগের জড় কারণ সম্ভূত বলে এই চিকিৎসা মত মানুষ বিশ্বাস করে এবং সেজন্য গুরু মাত্রায় ঔষধ প্রয়োগ করে। এই পদ্ধতি মতে জর দেহ ব্যাধির আকার তা চিকিৎসাযোগ্য এবং তজ্জন্য সার্বিক ওষুধের প্রয়োগ ক্ষেত্রে।
এইমতে বহুভেষজ পৃথকরূপে অথবা প্রত্যেক প্রধান উপসর্গের জন্য পৃথক পৃথক ঔষদের সংযোগে একটি মিশ্র ঔষধ রূপে প্রয়োগ করা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগের আরোগ্য সম্ভব নয় কারণ তা প্রাকৃতিক আরোগ্য প্রণালীর বিরোধী।
এই চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে দীর্ঘদিন ধরে ঔষধ খেলে রোগীর ভেষজ- ব্যাধির (drugs created disease) উদ্ভব হয় যা বিশেষ ক্ষতিকর এবং অপকার জনক। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা পড়ে ক্ষতি হলেও সামরিক রোগের উপশম হয় বলে বিশেষ আকর্ষণীয় কিন্তু রোগীর আরোগ্য বিধায়ক নয়। সাধারণ লোকের সহজ বা স্থূলবুদ্ধি কে বিমোহিত করার জন্য এর চমৎকার প্রচার ব্যবস্থা আছে।
হোমিওপ্যাথির মূল তথ্য বা কার্ডিনাল প্রিন্সিপালস অফ হোমিওপ্যাথি (The Cardinal Principal of Homeopathy)
হ্যানিম্যান সুদীর্ঘকাল ব্যাপি গবেষণা ও অনুসন্ধান করে জানতে পারেন যে প্রকৃতির আরোগ্য নীতি প্রধানত সাতটি মূল তথ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। তথ্যগুলো তিনি অর্গানন এ লিপিবদ্ধ করে গেছেন।
1. সমতত্ত্ব বা law of similia: তিনি সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে প্রকৃতির আরোগ্যের প্রথম নিয়ম হলো সমের প্রতিকার সম। তাই তিনি হোমিওপ্যাথির মূল তত্ত্ব বর্ণনার প্রথম স্থানেই তত্ত্ব কে প্রতিষ্ঠিত করেন। Similia Similibus Curanter অর্থাৎ সমের প্রতিকার সম – এই তত্ত্ব হ্যানিম্যানের বহু পূর্ব থেকেই পৃথিবীতে জানা থাকলেও স্বতন্ত্র একটা চিকিৎসা পদ্ধতি রূপে তিনি এর প্রথম প্রবর্তন করেন। বস্তুত এই প্রধান স্বতঃসিদ্ধ সত্যের উপরই হোমিওপ্যাথি প্রতিষ্ঠা। এই তত্ত্বকে হ্যানিম্যান অর্গাননে সদৃশ্য সদৃশ্য দ্বারা চিকিৎসিত হোক – এই নির্দেশাত্মক বাক্য রূপে প্রয়োগ করেন। এর মূল বক্তব্য হলো সামগ্রিকভাবে রোগীর উপসর্গের পর্যালোচনা করে সুস্থ শরীরে উপসর্গ উৎপাদনক্ষম ভেষজ জাত ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে। ভেষজের উপসর্গ ও লক্ষণ সমূহ যত রোগের উপসর্গ লক্ষণের অনুরূপ হবে আরোগ্য ক্রিয়াও তত সুনিশ্চিত রূপে প্রতিপন্ন হবে।
২. অমিশ্র তত্ত্ব বা Low of Simplex: এই তথ্য অনুসারে একসময় মাত্র একটি ঔষধ প্রয়োগ দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে। কারণ প্রত্যেক বস্তুর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে এবং এইজন্যই তা অপর বস্তু থেকে পৃথক। একাধিক ভেষজ বস্তুর মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সমতা থাকতে পারে। কিন্তু সূক্ষ্ম রূপে পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে প্রত্যেক বস্তুর তার নিজস্ব সত্তা ও কার্যের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। অতএব ওষুধকে একক ও অমিশ্র হতে হবে, আলোচনা, পরীক্ষা ও প্রয়োগ করতে হবে। কারণ দুইটি পৃথক বস্তুর সহাবস্থানে তৃতীয় একটি বস্তু সংঘটিত হয়। ওই নব উৎপাদিত বস্তু টি হয় উৎপাদক বস্তু দুটির থেকে পৃথক, স্বতন্ত্র গুন ও বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ঘটে নতুবা পূর্বোক্ত বস্তু দুইটির গুণের তারতম্য দেখা দেয়, অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় গুণসম্পন্ন থাকেনা। একাধিক বস্তু মিশ্রিত হলে তাদের আপেক্ষিক পরিমাণের বৃদ্ধি হয় বটে কিন্তু তাদের গুণগত বৃদ্ধি নাও হতে পারে। 500 গ্রাম কোন বস্তুর সঙ্গে পঞ্চ গুণসম্পন্ন 500 গ্রাম অপর একটি বস্তু মিশ্রিত হলে পরিমাণগত ভাবে ওই মিশ্রণটি 1000 গ্রাম হলেও গুণগত ভাবে তাদের গুণের সমাহার যে 6+ 5 বা 11 হবে তার কোনো মানে নেই।
3. অনু মাত্রা তত্ত্ব বা Low of minimum: ভেষজ বস্তুর যে পরিমাণ মাত্রায় কেবলমাত্র শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় শুধু সেই পরিমাণ ভেষজ প্রয়োগ দাঁড়াই রোগ আরোগ্য করতে হবে। কারণ অধিকমাত্রায় ভেষজের শরীরে অধিক মাত্রায় উত্তেজনা ও আলোড়ন সৃষ্টি কারণ হয়, ফলে শরীরের যান্ত্রিক বিকৃতি ও অবাঞ্ছিত রোগ বৃদ্ধি ঘটায়। সুনির্বাচিত সম লক্ষণ যুক্ত ভেষজের সক্রিয় প্রভাব তার অনু পরিমাণ দ্বারাই সম্পন্ন হয়। সুতরাং প্রকৃত রোগ আরোগ্যের জন্য অবশ্যই ভেষজকে যথাসম্ভব অনু মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
4. ভেষজ পরীক্ষা তত্ত্ব বা Low of Drug Proving: ভেষজকে আগে সুস্থ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ এর মাধ্যমে ওই ভেষজ সুস্থ শরীরে কি কি উপসর্গ উৎপাদন করছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে। পরে ওই ভেষজ ঠিক যেমন যেমন উপসর্গ উৎপাদনে সক্ষম অনুরোধ উপসর্গ যুক্ত অসুস্থ শরীরে প্রয়োগ করতে হবে। সুদৃশ্য বিধানমতে কেবলমাত্র সেই সমস্ত রোগীকে প্রয়োগ করতে হবে যার ভেষজ গুণাবলী সুপরিজ্ঞাত, অর্থাৎ সুস্থ শরীরে ওই ভেষজ কি কি উপসর্গ সৃষ্টি করতে সক্ষম তা আগে থাকতে অবহিত হতে হবে। অপরাপর চিকিৎসা পদ্ধতিতে ইতর প্রাণীর ওপর ভেষজ প্রয়োগ দ্বারা তার গুণাবলী পরিজ্ঞাত হতে হবে। তাতে ভেষজের সূক্ষ্ম আরোগ্য কর বিশেষ করে মানসিক লক্ষণাবলী অজ্ঞাত থাকে। কিন্তু সুস্থ মানুষের শরীরে সদৃশ্য বিধানমতে ভেষজ পরীক্ষা দ্বারা ভেষজের সূক্ষ্ম আরোগ্যকরণ গুণ এবং মানবমনের উপর তার প্রভাব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি সকল পরিজ্ঞাত হওয়া যায়।
5. পুরাতন ব্যাধি বাঁধ বা Low of Chronic Disease: দীর্ঘকালব্যাপী গভীর পর্যবেক্ষণ পরীক্ষণ এবং গবেষণা দ্বারা হ্যানিম্যান প্রমাণ করেন যে সকল প্রকার পুরাতন ব্যাধির মূল কারণ হলো তিনটি রোগ বীজ বা Miasm. এই তিনটি রোগ বীজ হল Psora, Sycosis, এবং Syphylis.
জীবের দেহ জড়পদার্থের দ্বারা সংঘটিত হলেও তার অভ্যন্তরে মন, প্রাণ, আত্মা, ইচ্ছা,অনিচ্ছা, কামনা, বাসনা ইত্যাদির অস্তিত্ব আমরা অনুভব করি। জগতের সকল পদার্থই কোন না কোন শক্তি দ্বারা স্বয়ংক্রিয় হয়। স্বয়ংক্রিয় আমাদের দেহ ও প্রাণশক্তি vital force দাঁড়া স্বয়ংক্রিয় হয়। প্রাণশক্তি আবার মনের দ্বারা পরিচালিত। চিন্তা, কামনা, বাসনা, ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি এগুলো হলো মনের ক্রিয়া কলাপ। যেহেতু চিন্তাধারা মন, মনের দ্বারা প্রাণ এবং প্রাণের ধারা দেহ পরিচালিত হয় সেহেতু চিন্তার সু বা কু প্রভাব ক্রমাগত মন-প্রাণ এবং দেহের উপর পড়বে।
মনুষ্য দেহ সুমনন পরিচালন যোগ্য অর্থাৎ দেহাভ্যন্তরস্থ মন যদি তার চিন্তাধারা সুপথে পরিচালিত করে তবে তার প্রভাবে মন-প্রাণ এবং দেহের সুশৃংখলা বজায় থাকবে। কিন্তু জীব প্রকৃতির এই নিয়ম যদি লংঘন করে অর্থাৎ মন তার চিন্তা ধারা কোন পথে পরিচালিত করে তবে ওই কুচিন্তাধারা প্রথমে মনের সুশৃঙ্খলা ছিন্ন করবে। মন যেহেতু প্রাণের পরিচালক সুতরাং বিশৃঙ্খলা মনের প্রভাব প্রাণে এবং বিশৃংখল প্রাণশক্তির কু প্রভাব স্থূল দেহের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে। চিন্তা ধারাকে কু পথে পরিচালিত করলে মনের সুশৃঙ্খলা ছিন্ন হয়ে দেহে যে রোগের সৃষ্টি হয় মহাত্মা হ্যানিম্যান তাকে সূরা নামে অভিহিত করেন। তিনি বলেন তিনটি রোগ বীজ সমস্ত পুরাতন ব্যাধির কারণ হলেও এদের মধ্যে Psora- র কাজই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, এটাই হলো জীবের সমস্ত ব্যাধির প্রকৃত মুলিভূত কারণ।
6. ভেষজ ক্রিয়াশীলতা বাদ বা Low of Drug Dynamization: সম চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসারে জীবের স্থূল দেহকে স্বয়ংক্রিয় করে প্রাণশক্তি বা vital force। প্রাণশক্তি স্বয়ংক্রিয় শক্তি। রোগ শক্তি দ্বারা প্রথমত এই প্রাণশক্তি বিক্রিত হয়। সুতরাং প্রাণশক্তিকে ব্যাধি মুক্ত করতে হলে ভেষজের স্বয়ংক্রিয় শক্তি দ্বারাই তাকে ব্যাধি মুক্ত করা প্রয়োজন।
স্থূল অবস্থান ভেষজের অন্তর্নিহিত আরোগ্য কর সক্রিয় শক্তি সুপ্ত অবস্থায় থাকে। পারস্পারিক ঘর্ষণ মন্থন বিচূর্ণ ইত্যাদি পদ্ধতি দ্বারা ভেষজের অন্তর্নিহিত এই শক্তিকে জাগ্রত করতে পারা যায়। অনু মাত্রায় ভেষজের সক্রিয় আরোগ্য কর শক্তির প্রয়োগে রোগ শক্তি দ্বারা বিকৃত প্রাণশক্তি সম্পূর্ণরূপে রোগ মুক্ত হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।
7. প্রাণশক্তি বাগ বা Low of Vital Force: জীবের দেহটি একটি জড় পদার্থ। কারণ মৃত্যুর পর আর এই দেহের কোন রোগ ক্রিয়া করার ক্ষমতা থাকেনা। সুতরাং প্রাক মৃত্যু পর্যন্ত কোন শক্তি যে এই দেহকে পরিচালিত করত এই বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না। হ্যানিম্যান প্রমাণ করেন যে জীবের স্থূল দেহের সজীবতা এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ শৃঙ্খলা যে শক্তি দ্বারা সাধিত হয় তাহলো প্রাণশক্তি বা Vital Force. কোন জড় পদার্থ অপশক্তির সাহায্য ব্যতিরেকেই নিজে স্বয়ংক্রিয় হতে পারে না। একটি জড় পদার্থ অপর জর পদার্থকে ক্রিয়াশীল করতে পারেনা, যদি না তার পিছনে কোন শক্তি থাকে, সুতরাং আমাদের এই জোরও দেহ যে স্বয়ংক্রিয় হচ্ছে তার পেছনে যে কোন শক্তি কাজ করছে তা আমরা সহজেই অনুমান করি। এই শক্তিকেই হ্যানিম্যান প্রাণশক্তি বলেছেন। তিনি বলেন প্রাণশক্তি দেহের পরিচালক। দেহের সকল প্রকার স্বাভাবিক ক্রিয়া ও অনুভূতির মূল উৎস এই প্রাণশক্তি। রোগ শক্তি যখন জিবকে কে আক্রমণ করে তখন প্রথমেই এই প্রাণশক্তি আক্রান্ত হয়। দেহে যে কষ্টকর উপসর্গগুলি দৃষ্ট হয় তা হল বিকৃত প্রাণশক্তির স্থূল দেহে বহিঃ প্রকাশিত রূপ। জীবের যখন রোগ মুক্তি ঘটে তখন চিকিৎসা দ্বারা প্রাকৃতিক নিয়মে এই প্রাণশক্তি আগে রোগমুক্ত হয়।
অর্গাননের 5 নম্বর সূত্র by হ্যানিম্যান- অর্গানন অফ মেডিসিন
রোগ আরোগ্য করবার সহায়তার জন্য চিকিৎসকের জানার প্রয়োজন – অচির রোগ উৎপত্তির পক্ষে অতি সম্ভাব্য উদ্দীপক কারণ অর্থাৎ exciting cause এবং চির রোগের সমগ্র ইতিহাসে বিশেষ বিশেষ জ্ঞাতব্য বিষয়গুলি যার দ্বারা তিনি কোন প্রাচীন রোগবিষ দ্বারা উদ্ভূত পীড়ার মূল কারণ এর সন্ধান পেতে পারেন। এই সকল অনুসন্ধানের মধ্যে রোগীর দৈহিক ধাতু প্রকৃতি তার নৈতিক চরিত্র ও বুদ্ধিবৃত্তি, তার জীবিকা, তার জীবন ধারণ প্রণালী ও রীতিনীতি, তার সামাজিক ও ব্যক্তিগত সম্বন্ধ, তার বয়স যৌন প্রবৃত্তি প্রভৃতি বিষয়ে অবহিত হতে হবে।
অর্গাননের 4 নম্বর সূত্র by হ্যানিম্যান- অর্গানন অফ মেডিসিন
যেসকল কারণ স্বাস্থ্যের বিশৃঙ্খলা আনয়ন করে এবং পীরার উৎপত্তি ঘটায়, স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি গণের নিকট হতে সেগুলিকে কেমন করে দূরে রাখা যায়, এসব তথ্য চিকিৎসকের জানা থাকলে তিনি স্বাস্থ্য সংরক্ষকও বটে।
যদি চিকিৎসকের স্পষ্ট বোধ থাকে পীড়ায় অর্থাৎ প্রত্যেক রোগের ক্ষেত্রে কি সারাতে হবে অর্থাৎ ব্যাধি সম্বন্ধে জ্ঞান, যদি তিনি জানেন ভেষজ সমূহে অর্থাৎ প্রত্যেকটি ভেষজের ভেতরে কি আরোগ্য শক্তি নিহিত আছে অর্থাৎ ভেষজ শক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান, যদি তিনি জ্ঞাত থাকেন – রোগীর ভেতরে যা পীরা বলে নিঃসন্দেহে জানা গেছে তার উপর কেমন করে স্পষ্ট ধারণা যুক্ত নীতি অনুসারে ভেষজের আরোগ্য শক্তিকে প্রয়োগ করতে হয়। যার ফলে আরোগ্য করতে শুরু হবে এবং ভেষজটির ক্রিয়া প্রণালী অনুসারে রোগীর উপর প্রয়োগের যোগ্যতা সম্বন্ধে তা সুনির্বাচিত কিনা অর্থাৎ ঔষধ নির্বাচন এবং তাছাড়া ইহা প্রস্তুত করার সঠিক পদ্ধতি কি পরিমাণে প্রয়োজন অর্থাৎ মাত্রা এবং উপযুক্ত সময় এবং পরিশেষে প্রত্যেকটা রোগীর ক্ষেত্রে কি বাধা ও তা কি উপায়ে দূরীভূত করা যায় যাতে আরোগ্য বিধান স্থায়ী হতে পারে । চিকিৎসকের এইসকল যদি জানা থাকে তাহলে অভিজ্ঞতা ও বিচারবুদ্ধি সম্মতভাবে কি প্রকারের চিকিৎসা করা যায় তখন তার বোধগম্য হবে এবং তিনি তখন আরোগ্য নৈপুণ্যে প্রকৃত চিকিৎসক।
অর্গাননের তৃতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা: রোগবিজ্ঞান প্রকৃত চিকিৎসক হতে গেলে যে জ্ঞানের প্রয়োজন তা এই সূত্রে হ্যানিম্যান উল্লেখ করেছেন। অর্গানন শিক্ষার মর্মকথা এই সূত্রে প্রকাশ পেয়েছে। হ্যানিম্যান এর মতে চিকিৎসকের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান প্রয়োজন হল আরোগ্য বিজ্ঞানী হওয়া। যে সকল জ্ঞানের সহায়তায় হ্যানিম্যানের সময়ে চিকিৎসকগণ চিকিৎসা কার্যে ব্রতী হতেন তার ত্রুটি ও বিফলতা হ্যানিম্যান বুঝেছিলেন। তিনি এই কথাই স্পষ্ট ভাবে নানা প্রবন্ধের বিতর দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন যে রোগবিজ্ঞান ভেষজ বিজ্ঞান এবং তার প্রয়োগ বিজ্ঞানই হল আরোগ্য নীতির মূলকথা।
তাহলে এখন প্রশ্ন আসে রোগবিজ্ঞান বলতে আমরা কি বুঝি? বিভিন্ন জাতীয় লক্ষণ সম্বলিত এক একটি রোগের নাম ধরে যে গ্রন্থ সংকলিত হয়েছে এবং তা অবলম্বন করে যে চিকিৎসা পদ্ধতি গড়ে উঠেছে তাকেই কি রোগ বিজ্ঞান বলে বুঝতে হবে?
এই প্রকার চিত্রে প্রত্যেকটি রোগের কেবল একই প্যাটার্ন, একই চাঁচ আমাদের মনশ্চক্ষে প্রতিফলিত হয় এবং সেই বাঁধাধরা ছকে ফেলে প্রত্যেকটি রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়। এখানে রোগ হলো মুখ্য, রোগী হলো গৌণ।
সাধারণভাবে একটি নির্ধারিত ছকে ফেলে কোন রোগের একই প্রকার চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রবর্তন চিকিৎসকের পক্ষে সহজ হতে পারে কিন্তু তাতে শিল্পীসুলভ চিকিৎসাকলানৈপুণ্যের কোন স্থান নেই।
প্রত্যেক মানুষের যেমন আকৃতিগত বিভিন্নতা আছে, কেমনি আছে তার ধাতু ও প্রকৃতিগত পার্থক্য। সুতরাং সংকলিত গ্রন্থ রোগের যে বর্ণনা থাকে তাতে সমগ্রভাবে রোগ চিত্র পাওয়া গেলেও রোগীর প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তার ঠিক মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
রোগীকে আশ্রয় করেই রোগের প্রকাশ, নতুবা রোগীর নিজস্ব কোন পৃথক সত্তা বাস্তব জগতে কল্পনা করা যায় না। প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিসত্তায় যেমন পার্থক্য রয়েছে তেমনই একই নামধেয় রোগের বিভিন্ন প্রকাশে যে বৈচিত্র থাকবে তাতে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। এই বৈচিত্রের প্রতি অপেক্ষা বা অবহেলাই হলো চিকিৎসায় কার বিফলতার মলীভূত কারণ। হ্যানিম্যান তাই এখানে বলেছেন।
সুতরাং চিকিৎসায় সফলতা লাভ করতে হলে রোগের বহিরঙ্গ চিত্র সম্বন্ধে যেমন জ্ঞান থাকা চাই তেমনি রোগীর ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলিও প্রত্যক্ষ করা প্রয়োজন। সেজন্য হ্যানিম্যান তৃতীয় সূত্রে প্রত্যেক রোগীর ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আরোগ্যের বিষয় কি তা চিকিৎসককে স্পষ্টভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে নির্দেশ দিয়েছে।
সকল রোগীকে এক ছকে না ফেলে প্রত্যেকটি রোগের সম্বন্ধে পৃথকভাবে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করাই হল হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার বৈশিষ্ট্য। তাই হল আরোগ্য বিজ্ঞান। এযাবৎকাল রোগ সম্বন্ধে শুধু না না গবেষণা ও তাত্ত্বিক আলোচনা হয়েছে কিন্তু তা রোগীর ব্যক্তিত্বকে উপেক্ষা করে। হ্যানিম্যানই সর্বপ্রথম আমাদের দৃষ্টি রোগীর দিকে ফিরিয়েছেন।
রোগীর বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ সম্বন্ধে নির্দেশ দিতে গিয়ে হ্যানিম্যান perceive কথাটি ব্যবহার করেছেন। Perceive কথাটির ভিতরে শুধু জানা ছাড়া আরো কিছু গভীর ব্যঞ্জনা আছে। জনার ভিতরে আছে শুধু বুদ্ধি ও যুক্তির ক্রিয়া, কিন্তু perceive কথার ভিতরে প্রত্যক্ষ বোধের ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য অনুভব এর অর্থ প্রকাশ পায়।
অর্গাননের দ্বিতীয় সূত্রby হ্যানিম্যান- অর্গানন অফ মেডিসিন
আরোগ্য বিধান এর উচ্চতম আদর্শ হল দ্রুত, বিনা কষ্টে ও স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যের পুনরুদ্ধার কিংবা স্বল্পতম সময়ের মধ্যে, সর্বাপেক্ষা নির্ভরযোগ্য ও নির্দোষ উপায়ে সহজবোধ্য নীতির সাহয্যে সমগ্রভাবে রোগের দূরীকরণ ও বিনাশ।
অর্গাননের দ্বিতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা:
দ্বিতীয় সূত্রের হ্যানিম্যান চিকিৎসার উচ্চতম আদর্শের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রায় 2 হাজার বৎসর পূর্বে Asclepiades নামের একজন গ্রিক চিকিৎসকও উক্ত মর্মে চিকিৎসার আদর্শ সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন। তার আদর্শের সারমর্ম ছিল অতিদ্রুত, নির্বিঘ্নে, ও সুখকর উপায় রোগের আরোগ্য বিধান করতে হবে। কিন্তু সেই আদর্শ তার কল্পনাতেই আবদ্ধ ছিল, সুদীর্ঘকাল পরে তাকে বাস্তবে রূপায়িত করলেন হ্যানিম্যান।
দ্বিতীয় সূত্রের আদর্শ আরোগ্য প্রসঙ্গ হ্যানিম্যান কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছেন। তার প্রথমটি হলো আরোগ্য বিধানের গতি দ্রুত হওয়া চাই । অবশ্য সকল চিকিৎসা পদ্ধতিতেই দ্রুত আরোগ্য বিধানের কথা স্বীকৃত হয়েছে।
দ্বিতীয় শর্ত হলো আরোগ্য বিধান কার্য যতদূর সম্ভব বিনা কষ্টে ও নির্দোষ ভাবে সাধন করতে হবে। আগুনে ঘৃতাহুতি দেবার মত যদি রোগ যন্ত্রণার উপর আরো যন্ত্রণা চাপানো হয় তাহলে রোগীর অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে। হ্যানিম্যানের সময়ে চিকিৎসার ব্যাপারে নানা রূপ আসুরিক পদ্ধতি ও প্রকরণের ব্যবস্থা ছিল এমনকি পচন নিবারনের জন্য আহত অঙ্গকে ফুটন্ত তেলে কিংবা আলকাতরার মধ্যে ডুবানো হত। সেটা যে কি ভীষণ যন্ত্রণা তা সহজেই অনুমেয়। সেখানে যদি কষ্ট বিহীন কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারলেই রোগীর পক্ষে কত না সুখের হয় । হ্যানিম্যান সেইজন্য আদর্শ চিকিৎসার একটি অঙ্গরূপে কষ্ট বিহীন চিকিৎসার কথা উল্লেখ করেছেন।
চিকিৎসার আদর্শ সম্বন্ধে তৃতীয় প্রয়োজন হল স্থায়ীভাবে আরোগ্য বিধান। পীড়াহেতু দেহ ও মনে যে অসুখ ও অশান্তি আসে সেটা বিদূরিত করে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের ফিরাইয়া আনাই হল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে।
কিন্তু সে উদ্দেশ্য সাধিত না হয়ে যদি শুধু সামরিক উপশম আসে কিংবা সাময়িক উপশমের পর আবার অন্য কোনো উপসর্গ এসে উপস্থিত হয় – তাহলে সেই চিকিৎসাকে কখনোই আদর্শ চিকিৎসা বলা চলে না এবং সেটা চিকিৎসকের কখনো কাম্য হতে পারে না।
চিকিৎসার অন্যতম আদর্শ হলো সমগ্রভাবে রোগের দূরীকরণ। রোগের যখন উৎপত্তি হয় তখন দেহে ও মনে নানা রকম লক্ষণ প্রকাশিত হয়। সেগুলির কয়েকটি উৎকট যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে আবার কতগুলি হয়তো অপেক্ষাকৃত কম যন্ত্রণাদায়ক। যদি এরূপভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় যাতে লক্ষণ গুলির মাত্র আংশিক উপশম হয় তাহলে সেই চিকিৎসাকেও আদর্শ বলে গণ্য করা যায় না। সমগ্রভাবে সমস্ত লক্ষণ গুলি বিদূরিত হলে তবেই তাকে বলে আদর্শ চিকিৎসা।
আরোগ্য বিধান নির্দোষ ভাবে হওয়া চাই। হ্যানিম্যানের সময়ে শিরা কেটে রক্ত বের করে দিয়ে, কোন স্থান পুড়িয়ে ক্ষত করে কিংবা অন্য কোন উৎকট পদ্ধতি অবলম্বন করে যেসব চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল সেগুলো কখনোই নির্দেশ বলা চলে না। তাতে অতিরিক্ত রক্ত ও রসের ক্ষরণ হেতু রোগী স্বভাবতই অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়তো। এবং তার ফলে রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রোগীর অন্য কোন মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হবার প্রবণতা বৃদ্ধি পেত। সুতরাং এই প্রকার ত্রুটি ও দূষণমুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিকে আদর্শ চিকিৎসা বলিয়া ধরা যায় না।
সবশেষে হ্যানিম্যান বলেছেন – আদর্শ আরোগ্যের মূলে থাকে চাই এক সহজবোধ্য নীতি যার সাহায্যে অভ্রান্ত ভাবে চিকিৎসা পরিচালনা করা সম্ভব। কল্পনা বা অনুমানের উপর নির্ভর করে কিংবা ধারনার অতীত কোন ক্রিয়া কে আশ্রয় করে অনেক সময় হয়তো রোগের উপশম বা আরোগ্যলাভ হতে পারে। কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত কোন সুদৃঢ় নীতির উপর সেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠিত নয়। বিশেষ কোন ক্ষেত্রে উপকার দেখা গেলেও সবক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা সম্ভব হয় না। গণনার সাহায্যে বৈজ্ঞানিকগণ যেসকল নৈসর্গিক ঘটনাবলী অভ্রান্তভাবে ঘোষণা করেন তার ভিতরে পাওয়া যায় এক অপরিবর্তনীয় চিরন্তন নীতি। সেই নীতি সর্বকালে সত্য ও অমোঘ এবং অনুকরণীয়। কিন্তু যে পদ্ধতির ভিতর কোন প্রয়োগ নীতি খুঁজে পাওয়া যায় না সেটা দুর্বোধ্য এবং তা কখনও চিকিৎসার আদর্শ নীতি গৃহীত হতে পারে না।
অর্গাননের প্রথম সূত্র by হ্যানিম্যান ( অর্গানন অফ মেডিসিন )
” চিকিৎসকের মহৎও একমাত্র উদ্দেশ্য হলো রোগীকে স্বাস্থ্যে ফিরাইয়া আনা – যাকে বলা আরোগ্য বিধান করা।”
অর্গাননের প্রথম সূত্র ব্যাখ্যা: হ্যানিম্যানের সময়ে চিকিৎসক সমাজে এরূপ ধারণা প্রচলিত ছিল যে রোগের উৎপত্তির মূলত কারণ হল কোন উগ্র প্রকৃতির জরিয় পদার্থ । যেটা শরীরের মধ্যে লুকিয়ে থেকে কোন ব্যাধির সৃষ্টি করে । কল্পনা ও অনুমানের উপর ভিত্তি করেই এই ধারণা মূলত গড়ে উঠেছিল। ধারনার অনুবর্তী হয়ে চিকিৎসকগণের চিকিৎসা প্রণালী তখন অনুষ্ঠিত হতো। তারা মনে করতেন যে রোগ উৎপাদনের মূল কারণটিকে দেহ থেকে বের করতে পারলেই রোগটা সেরে যাবে।
সেজন্য তারা বমনকারক, শ্লেষ্মা ও লালা নিঃসারক, ঘর্ম উৎপাদক, বিরেচক প্রভৃতি ঔষধি প্রয়োগ করে দূষিত পদার্থটিকে দূর করবার চেষ্টা করতেন। কখনো চিকিৎসকগণ যোক লাগিয়ে রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের করে দিতেন কখনো আবার বেদনা স্থানে প্রদাহজনক কোন উগ্র প্রলেপ লাগিয়ে সেই স্থান পুরে ফেলে ক্ষত উৎপাদন করতেন। এই ধরনের কাজের ফলে রোগী কখনো কখনো কিছুদিনের জন্য উপশম বোধ করলেও তাতে রোগী স্থায়ীভাবে কোন উপকার পেতে না।
বরং দেহ থেকে রস ও রক্তের প্রভূত অপচয় হেতু রোগী আরো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার ফলে রোগীর রোগ প্রবণতা আরো বেড়ে যায়। হ্যানিম্যানের যুগে সেই স্থূল ধারণা ও ততোধিক উৎকট চিকিৎসাপদ্ধতি বর্তমান বৈজ্ঞানিক যুগে আর প্রচলিত না থাকলেও রোগ উৎপত্তির কারণ যে ভৌতিক পদার্থ অর্থাৎ জীবাণু সমূহ এই মতবাদ বৈজ্ঞানিক সমাজে এখনও স্বীকৃত। সেই অনুসারে চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে এবং নিত্য পরিবর্তনশীল নতুন নতুন চিকিৎসা ব্যবস্থাও আবিষ্কৃত হচ্ছে।
দূরদর্শী হ্যানিম্যান দেখিয়েছিলেন (এমনকি এখনো যাহা বিদ্যমান রয়েছে) যে রোগ তথ্য সম্বন্ধে কল্পনামূলক গবেষণার আলেয়ার পিছনে ছুটতে ছুটতেই চিকিৎসকের সমস্ত প্রতিভা ও শক্তি ব্যয় হচ্ছে এবং তার ফলে তারা যে অনিশ্চিত মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন সেটা যেমন ধোঁয়াটে তেমনি জটিল।
এইরকম অমানুষিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা পাণ্ডিত্যের গর্বে স্ফীত হতে পারে কিন্তু তাতে রোগীর রোগ নিরাময় হয় না কিংবা রোগীর রোগকাতর আর্তনাদ দূরীভূত হয় না।
সেই জন্য এই প্রথম সূত্রে ও তার পাদ টিকায় হ্যানিম্যান চিকিৎসককে তার কর্তব্য সম্বন্ধে অবহিত করে দিয়েছেন এবং বলেছে বলেছেন যে চিকিৎসকের একমাত্র কর্তব্য হলো রোগীকে আরোগ্য প্রদান করা কল্পনার বসে অদৃশ্য কারণের কথা অনুসন্ধানে আড়ম্বরপূর্ণ জটিল ধাঁধা সৃষ্টি করা নয়।
Marasmus, Nose Bleed, Umbilicus oozing, Gout, Rheumatism, Hydrocel, Chilblain, Haemorrhoids, Lienteria, Exudations, Indigestions, Paralysis, Epilapsy, Boils etc.
Sign & Symptoms of Abrotanum –
Marasmus: The main sign & symptoms of Abrotanum is in. Marasmus is called emaciation. Some children are becoming emaciate even they are taking sufficient food and also they have sufficient appetite.
Nose Bleed
Nose Bleed: Abrotanum also have good functions on nose bleeding especially of morning nose bleed.
Umbilicus Oozing: Wonderful functions on umbilicus oozing. The oozing or secretions may be watery, may be yellowish, may be bloody.
Gout: The main sign & symptoms of Abrotanum in Gout is swelling start before pain. No other medicines have this peculiar symptoms. Joint become very stiff and lame.
Rheumatism: Abrotanum rheumatic pain in shoulder along with arms and wrist. Sensation of pricking pain and sensation of coldness in finger and feet. One of the most important symptoms is pain in lumber region extending to spermatic cord.
Hydrocel: In children has cured hydrocel wonderfully.
Chilblain
Chilblain: In winter season so number of people suffer from frostbite. The fingers and toes become red, start burning sensation and itching on the effected side. This type of problems cured by Abrotanum.
Haemorrhoids: Abrotanum also works on haemorrhoids or piles. One of the important symptoms about haemorrhoids is that hemorrhoids comes after rheumatisms. When rheumatisms cures then piles or haemorroids comes back.
Exudations: Abrotanum has functions in exudations of pleura, knee joint if the mental and physical symptoms permit.
Abrotanum also used in Boils where Heper Sulpher did not work properly. Epilepsy and Paralysis also has cured with this medicine.
Doses of Abrotanum:
In acute diseases Abrotanum could be use in lower potency like 6CH, 30CH, or 200CH. But in chronic diseases according to case study Abrotanum could be use 1m to 50M or CM. But higher potency always used after doctor’s advice.
Side Effects of Abrotanum:
No side effects not yet known. But appropriate uses can worsen the diseases symptoms. At that moment anti-dote could be use.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.