অর্গাননের 6 নম্বর সূত্র
অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে সমর্থন মিলে না এমন মনগড়া কল্পনাকে অসার বলে কৃত নিশ্চয় হয়েছে এরূপ পক্ষপাত শূন্য দ্রস্টার তার বোধশক্তি যতই কেন তীব্র হোক না – প্রত্যেক রোগের ক্ষেত্রে তার দেহ ও মনের স্বাভাবিক অবস্থার বহিঃ প্রকাশিত বৈলক্ষ্ন্য ছাড়া আর কিছুই বুঝতে পারা সম্ভব নয়। অর্থাৎ দ্রষ্টা শুধু লক্ষ করতে পারে বর্তমান রোগ অবস্থায় রোগীর স্বাস্থ্য থেকে বিচ্যুতি; আর তা জানা যায় রোগী নিজে যা অনুভব করেন বা বোধ করেন, পরিচর্যারত ব্যক্তিগণ রোগীর সম্বন্ধে যা বলেন এবং চিকিৎসক নিজে যা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে যা পান তা হতে। বোধগম্য এইসকল লক্ষণ ও প্রকাশের ভিতর দিয়ে ধরা পড়ে ব্যাধির সমগ্র মূর্তি, অর্থাৎ সেগুলি হল ব্যাধির যথার্থ ও ধারণাগম্য প্রতিচ্ছবি।
ব্যাখ্যা: বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে যুক্তি ও বিচারনিষ্ট মনের প্রয়োজন। এখানে কল্পনা বা অনুমান এর কোন স্থান নেই। যেখানে কল্পনাও অনুমানের উপরে জ্ঞানের ভিত্তি সেখানে দৃষ্টি হয় পক্ষপাত দুষ্ট। প্রত্যক্ষ যে জ্ঞান লাভ করা যায় পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে। কিন্তু মন যেখানে নিরপেক্ষ নয় সেখানে পর্যবেক্ষণ যে ভ্রমাত্মক হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। হ্যানিম্যানের সময়ে চিকিৎসক সমাজ অসার কল্পনা ও বৃথা অনুমানের উপর ভিত্তি করে রোগীর চিকিৎসা করত। রোগী দিগকে তাদের অলীক কল্পনা প্রসূত খেয়ালখুশির আত্মসমর্পণ করতে হতো।
চিকিৎসকগণ তাদের মনগড়া ধারণাকে সমর্থন দেবার জন্য ঘটনা ও তথ্যসমূহ কে বিকৃত করে দেখতেন। তখনকার দিনে শরীরবৃত্ত বিকার যেটুকু বৈজ্ঞানিক তথ্যের সন্ধান পাওয়া যেত তাও কল্পনার অস্বচ্ছতায় ও দুর্বোধ্য অস্পষ্ট ছিল। সেই জন্য তৎকালীন তথাকথিত চিকিৎসাশাস্ত্রের সাহায্য না নিয়ে যেসব লক্ষণ ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য সেই গুলির উপর নির্ভরশীল ছিলেন।
রোগের উৎপত্তি এবং দেহাভ্যন্তরে তার বিক্রিয়া দেখবার, জানবার এবং বুঝবার যখন অন্য কোন উপায় নেই তখন লক্ষণ সমষ্টিকে রোগের প্রকাশ প্রত্যক্ষ করা হলো রোগের স্বরূপ নিরূপণ করবার একমাত্র পন্থা এবং তা বিজ্ঞানসম্মত। আর এই লক্ষণ সমষ্টি পর্যবেক্ষণের জন্য চাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি যার সাহায্যে চিকিৎসকের অবিকৃত মন সকল তথ্য ও ঘটনাকে যথার্থরূপে গ্রহণ করতে পারবে। হ্যানিম্যান সেই জন্য এই সূত্রে চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় বোনের উল্লেখ প্রসঙ্গে পক্ষ পদ শূন্য দ্রষ্টা (unprejudiced observer) কথাটির উপরে এত জোর দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিকৃতির ফলে রোগীর যেসকল লক্ষণ চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, তা রোগীর দেহ গত পরিবর্তন বা অসুস্থতার ভিতর দিয়ে পরিস্ফুট লক্ষণ শুধু নয়, রোগের প্রকৃত পরিচয় পেতে হলে রোগী নিজে যা অনুভব করে এবং রোগীর শুশ্রুষাকারী রোগের সম্বন্ধে যা বলে তাও চিকিৎসককে তার নিজস্ব পর্যবেক্ষণের সঙ্গে অঙ্গীভূত করে নিতে হবে। তবেই হবে রোগীর লক্ষণ সমষ্টির সম্বন্ধে চিকিৎসকের পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা।